তিন কোটি টাকার ক্ষতি,
চারটি স্থায়ী রিজার্ভ লাইন ব্যবস্থার দাবী
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। রবিবার ভোর আনুমানিক পোনে ৪টার সময় হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজার বড়পুলের পূর্ব পাড়ে দক্ষিণ পাশে ফারিয়া ফার্নিচার, কাঠগোলা ফার্নিচার ও হারেছ ট্রেডার্স পুড়ে ছাই হয়। তম্মধ্যে, হারেছ ট্রেডার্সের গুদামে ৬ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় তুলা জাতীয় পণ্য থাকায় মালামাল পুড়ে যায়।
ঘটনায় ফারিয়া ফার্নিচারের মালামাল ৮০ লাখ টাকা ও নগদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, ফারিয়া ফার্নিচার ভবনের মালিকের সাড়ে তিন বছর পূর্বে গড়ে তোলা ভবন নির্মাণ ব্যয় ৩০ লাখ টাকা, কাঠগোলা ফার্নিচারের মালামাল ১ কোটি, নগদ ৬ লক্ষ টাকা ও ভবন নির্মাণ ব্যয় ৩০ লক্ষ টাকা এবং হারেছ ট্রেডার্সের মালামাল ও ভবনের ক্ষতি আনুমানিক ৬০ লাখ টাকা সহ সর্বমোট ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই বিষয়ে কথা হয় ফারিয়া ফার্নিচারের স্বত্ত্বাধিকারি আমিনুল ইসলাম খোকন বলেন, আমার ঘরে থাকা ৮০ লাখ টাকার মালামাল ছাই হয়ে গেছে। নগদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মোকামের জন্য রাখলে সেটিও ছাই হয়ে যায়। এমনকি ব্র্যাক ব্যাংকে ৮ লাখ টাকা ঋণ ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৮-১০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোকানের কর্মচারি আমাকে মোবাইলে কল করলে দ্রুত এসে দেখি আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আমার সব। প্রবাস জীবনের সকল সঞ্চয় এখানে ছিলো। এখন সবই শেষ।
ফরিয়া ফার্নিচার ভবনের মালিক মো. আব্দুস সালাম মিয়া জানান, সাড়ে তিন বছর পূর্বে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে এখন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও ভবন নির্মাণের সময় ধার করা প্রায় ১০ লাখ টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারিনি।
ফারিয়া ফার্নিচারের কর্মচারী মো. হাবীব খাঁন জানান, আমি নিয়মিত নীচ তলায় ঘুমাতাম। আজও(রবিবার ভোরে) ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মোড় দিলে হাত টিনের মধ্যে লেগে পুড়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে উঠে দেখি বিদ্যুৎ নেই, ঘোর অন্ধকার, কোন রকম দৌড়ে উপরে উঠে রাস্তায় নেমে দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। চিৎকার-চেচামেচী করলে নাইটগার্ড এসে আরেক দোকানদার মিরণ ভাইকে ঘুম থেকে জাগায়। এর মধ্যে মালিককে ফোন করি। মিরন ভাই বিদ্যুৎ অফিসে কল করে এবং ফায়ারসার্ভিসকে ফোন করে জানায়। ২-৩ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস আসে। তবে রিজার্ভ ট্যাংকে পানি না থাকায় ও নদী থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা নিতে দেরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। টানা আড়াই ঘন্টা পর আগুন নিভে।
কাঠগোলা ফার্নিচারের স্বত্ত্বাধিকারি মো. আব্দুল মান্নান জানান, আমার প্রায় ১ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। মোকামের জন্য রাখা নগদ ৬ লক্ষ টাকা পু্ড়ে ছাই। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটিও এখন অদৃশ্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনতা ব্যাংক হাজীগঞ্জ শাখায় ১০ লাখ টাকা ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৮-১০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। ৪০ বছরের মতো ব্যবসা করি। সকল সঞ্চয় শেষ। তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের রিজার্ভ ট্যাংকে পানি না থাকায় দ্রুত আগুন নিভাতে পারেনি। এমনকি নদী থেকে পানি নিতেও দেরি হয়। সেজন্য দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়।
হারেছ ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারি মো. হারেছ জানান, ফায়ার সার্ভিস দ্রুত কাজ করলে আমার ভবন ও গুদামে থাকা মালামালের কোন ক্ষতি হতো না। আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে ৬৫ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ হয়েছে। এখনও ৫০ লাখ টাকা ঋণ রয়ে গেছে।
এই বিষয়ে কথা হয় হাজীগঞ্জ ফায়ারসার্ভিস স্টেশন অফিসার মো. জাকির হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলো না। ৪টা ৩৫ মিনিটে ফোন পেয়ে ২ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। পরবর্তীতে জেলা উপপরিচালক মহোদয় শাহরাস্তি সহ কয়েকটি ইউনিটে খবর দিয়ে ফোর্স নিয়ে আসেন। এমনকি তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সহযোগীতা করেন। তবে নদীতে যাওয়ার সিঁড়ির রাস্তাটি সরু হওয়ায় প্রাথমিক চেষ্টায় পানির উৎসে যেতে পারিনি। পরবর্তীতে বিকল্প ব্যবস্থায় পানি ছিটানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিজার্ভ ট্যাংকে পানি ছিলো। কিন্তু আগুনের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়াও ৬ তলা ভবনে রিজার্ভ পানি পাওয়া যায় নি। গুদামে গ্যাস সংযোগ থাকায় ওই ভবনে আগুন ছড়িয়েছে। তুলা ও কাপড় জাতীয় পণ্য হওয়ায় সেগুলো দ্রুত পুড়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফার্নিচারের দোকানে স্পিড ও কাঠ থাকায় আগুন দমানো অসম্ভব ছিলো। সর্বশেষ পাশের ৬ তলা ভবনটি রক্ষার চেষ্টা করেছি। অনুসন্ধানের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, হাজীগঞ্জ একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। এখানে মাত্র চারটি স্থায়ী পানির রিজার্ভ লাইন ব্যবস্থা করলেই সকল প্রকার অগ্নিনির্বাপন দ্রুত সম্ভব হবে। স্থানীয় মেয়র সহ সংশ্লিষ্ট সকলে এর উদ্যোগ নিলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচবে ব্যবসায়ীরা।
ফায়ার সার্ভিস চাঁদপুর জেলা উপপরিচালক মো. আলী আকবর জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। দাহ্য পদার্থ ও কাঠ থাকায় দুটি দোকান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ৬ তলা ভবনটি রক্ষা পেয়েছে।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আঃসঃমঃ মাহবুব উল আলম লিপন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন
অগ্নিকান্ডের ক্ষয় ক্ষতি দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম লিপন। হাজীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মোঃ মাইনুদ্দিন, সাবেক মেয়র আব্দুল মান্নান খান বাচ্চু, পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহম্মেদ খসরু।