গত জানুয়ারী বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় দৈনিকের শেষ পাতায় প্রকাশিত “২ বছর ৯ মাসেও শুরু হয়নি আপিল শুনানি” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে বিস্মিত না হয়ে পারলাম না। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় পেরিয়ে যাচ্ছে আরো একটি বছর। তারপরও চলন্ত বাসে গণ ধর্ষণ ও হত্যা মামলার কাজ শেষ হয়নি।বরং গত তিন বছর বিচারের আশায় বুক বেঁধে থাকা রুপার মা হাসনা হেনা মেয়ে হত্যার বিচার তার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সংবাদে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় গত ২ বছর ৯ মাসেও আপিল শুনানি শুরু হয়নি। যে কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বাদী রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান তার বোনের হত্যার মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তার ভাই বিচারের আশায় বিভিন্ন জনের নিকট পরামর্শ নিয়ে ও দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি।
সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হওয়া সহ দেশে আরো বেশ কিছু নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত বছরের শেষের দিকে সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশের দর্শকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়ার দাবি ওঠে সারা দেশে। এ দাবি সারাদেশে একযোগে বেগবান হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আইন পাস হয়। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ, ব্যবহার অভাবে আইন বাস্তবতায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখেও ভুক্তভোগীদের কোন উপকারে আসছে বলে মনে হচ্ছে না। নিম্ন আদালতে শাস্তি দিবে আর উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে তা ঝুলিয়ে বছরের পর বছর রাখা হবে। এটা আইনের সঠিক প্রয়োগ হতে পারে না।এতে আসামিপক্ষ দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে, বাদীপক্ষকে হুমকি-ধমকি, ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলা থেকে সরানোর সুযোগ থাকছে। এতে বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পাওয়া থেকেই বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। এমন প্রক্রিয়া ভুক্তভোগী দের জন্য জন্য সহায়ক হতে পারে না বরং বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদটিতে রুপা হত্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি জানান, নিম্ন আদালতে ঘোষিত রায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হলেও আপিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর নথিপত্র হাইকোর্টে চলে যায়। পরে আপিলের শুনানি তালিকায় ২ বছর ৯ মাসেও তার কার্য তালিকায় আসেনি। তাই শুনানিও শুরু হয়নি। সেটি নাকি আদালতের এখতিয়ার।
বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এভাবে চলতে থাকলে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ হওয়া তো দূরের কথা বরং তা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা যতটুকু চাঞ্চল্যকর তার চেয়ে বেশি চাঞ্চল্যকর ঘটনা হচ্ছে যখন ২ বছর ৯ মাসেও ধর্ষণের বিচারের আপিল শুনানি কার্য তালিকায় না আসা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিচার ব্যবস্থার উপরও দিনের পর দিন মানুষের আস্থা হারাতে থাকবে। ‘বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে’ এই উক্তিটি বাস্তবে রূপ নিবে। দেশে আইনের শাসনের যে বেহাল দশা তা রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। এটি রীতিমতো আইনের করুণ দশার প্রতিচ্ছবি। তাই দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আরো দায়িত্বশীল ও যত্নবান হতে হবে।