২০২০ সাল শেষ প্রান্তে। এ সালটি শুধু আমাদের দেশ নয় সারা বিশ্বের জন্য ছিল ভয় ও আতঙ্কের। ২০২০ সালটি আসলেই ছিল বিষে ভরা। এ সালেই করোনা নামক মহামারী বিশ্বের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। তছনছ করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ মহামারীর কারণে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বের প্রায় ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮ কোটি ২ লাখ ৭১ হাজার ১৫৫ জন। যদিও এর মধ্যে করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৭ হাজার ১৫৫ জন। করোনা মহামারীর ফলে অনেকের সাজানো-গোছানো ব্যবসা, চাকুরী এমনকি পরিবারও তছনছ গেছে।
এ বছরের প্রথম দিকে এই করোনা মহামারীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় চীনের উহান শহরে।
ক্রমান্বয়ে সারা বিশ্বে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যেতে থাকে। ফলে দেশে দেশে মৃত্যুর পাশাপাশি ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে।
আমাদের দেশে মার্চ মাসের প্রথমদিকে করোনা নামক মারাত্মক এ মহামারী সনাক্ত শুরু হয়। দেশে এ মহামারী ঠেকাতে কঠোর লকডাউন দেয় সরকার। এর কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে দেশের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অচল হয়ে পড়ে। প্রায় টানা দুই মাস লকডাউন এরপর কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি মিললেও এর মধ্যে মানুষ অনেকটাই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। এ করোনা মহামারীতে কেউ চাকুরী হারিয়েছেন, হারিয়েছেন আয়-রোজগার।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে করোনা মহামারীর মধ্যেও কিছু মানুষ চাল, ডাল, আটা, লবণ সহ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে নিজেরা হাতিয়েছেন লক্ষ কোটি টাকা। অন্যদিকে আয়-রোজগারহীন মানুষ গুলো হয়েছে আরো নিঃস্ব ও সর্বশান্ত। লকডাউন এর সময় ঘরমুখী ও আয়-রোজগারহীন মানুষের জন্য সরকার কর্তৃক খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও সেখানেও লক্ষ্য করা গেছে জনপ্রতিনিধিদের চুরি-চামারির কীর্তি কান্ড। মহামারীর কারণে মানুষের জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যেখানে মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা ছিল, সেখানে মানুষ মানুষের প্রতি অমানবিক হতে দেখা গেছে। শুধু খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নয়, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা ও মাস্ক – পিপিই এবং করোনার ভুয়া টেস্ট নিয়ে যে তুঘলুকি কাণ্ড মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে তা ভুলার নয়। এ করোনাকালীন সময়েও দেশে থেমে ছিলনা খুন,হত্যা, ধর্ষণের মত সংগঠিত অপকর্মগুলো। এ ২০২০ সালটি অনেকের জন্য কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ২০২০ সালটি শেষ হচ্ছে। আসছে ২০২১ সাল। ২০২১ সালটি মানুষের জন্য কল্যাণকর হোক এবং মানুষ মানুষের প্রতি মানবিক ও সহানুভূতিশীল হোক এ প্রত্যাশাই করি।